Bangla Essay | প্রবন্ধ রচনা

একটি নদীর আত্মকাহিনী – বাংলা রচনা

 সূচনা

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদনদী। আমি শ্যামল বাংলার মায়াবী আঁচলে বয়ে চলা তেমনই একটি নদী। হিমালয়ের হিমবাহের বিশাল বরফের স্তর গলে সরল-তরল হয়ে সমতল সুন্দরী বঙ্গভূমিতে আমি নেমে এসেছি। আমি বাংলার গ্রামগঞ্জ, বাংলার মানুষের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছি। সবাই আমার আপনজন। আমিও সবার আপন। 

নদীর আপন বৈশিষ্ট্য

সবকিছুরই কোনাে না কোনাে স্বকীয়তা আছে। আমার কতিপয় স্বকীয়তা আছে। নিরন্তর বয়ে চলাই আমার বৈশিষ্ট্য। আমি দুই তীরকে জল ও পলি দিয়ে সজীব ও উর্বর করে তুলি। আমার ওপর দিয়ে কত মালবাহী নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ আর পালতােলা নৌকায় যাতায়াত করে মানুষ। তার কোনাে ইয়ত্তা নেই। আমার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাটবাজার, গ্রাম-গঞ্জ-বন্দর, শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র। সাদা বক, মাছরাঙা, গাঙচিল আমার ওপর দিয়ে উড়ে যায়। পানকৌড়িরা আমার বুকে ডুব দিয়ে খাবার শিকার করে। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কখনাে রুদ্ররূপ ধারণ করে আমি গ্রাস করি গ্রামজনপদ, ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি। বর্ষাকালে আমার রূপ দেখে কেউ আমাকে রাক্ষসী বলে। আবার গ্রীষ্মে আমার বুকে হাঁটুজল দেখে কেউ-বা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এভাবে কখনাে সােহাগী, কখনাে রাক্ষসী হয়ে বয়ে যাই আমি অবিরাম। আমার নেই কোনাে অবসর। আমাকে নিয়ে কত গল্প উপন্যাস, কবিতা, গান রচিত হয়েছে। কেউ আমাকে দেখে সর্বনাশা হিসেবে, কেউ দেখে সজীব, সুন্দর রসদের উৎস হিসেবে। আমি লাজ-নম্র পল্লিবধূর মতাে ছন্দ তুলে এঁকেবেঁকে চলি। এঁকেবেঁকে চলতে চলতে মানুষ ও প্রকৃতিকে নানাভাবে আলােড়িত করে যাই। 

গন্তব্য

আমার যেমন উৎপত্তিস্থল আছে, তেমনই আছে গন্তব্যও। আমার গন্তব্য হলাে সাগর। আমি এঁকেবেঁকে চলি গ্রাম-গঞ্জের পাশ দিয়ে। কোথাও গিয়ে আমার পথ আটকালে আমি নতুন পথ খুঁজে নিই। কিন্তু আমর এ চলারও শেষ আছে। আর তা হলাে সমুদ্র বা আমার চেয়ে বড় কোনাে নদী। তার মধ্যে আমি বিলীন হয়ে যাই। এটাই আমার চুড়ান্ত গন্তব্য। আর আমি তাতে হারিয়ে গিয়ে পরম শান্তি খুঁজে পাই। 

উপকারিতা

আমার বয়ে চলার মাঝে আমি মানুষের নানান উপকার করে থাকি। আমি মানুষের জলের অভাব পূরণ করি। আবাদি জমির প্রয়ােজনীয় জলও আমিই সরবরাহ করি। বর্ষায় পলি দিয়ে চাষের জমিগুলােকে উর্বর করে তুলি। 

অপকারিতা

নানাবিধ উপকারের পাশাপাশি আমার দ্বারা মানুষের কতিপয় অপকারও সাধিত হয়। আমার চলার পথে নানান জনের ঘরবাড়ি আমার বুকে ভেঙে পড়ে। বর্ষার প্রবল বর্ষণে আমার পানি উপচে পড়ে বন্যা সৃষ্টি করে। মানুষের আবাদ নষ্ট হয়। জীবনযাত্রায় নানারকম ব্যাঘাত ঘটে।

উপসংহার

নদীমেঘনা, নদীমাতৃক বাংলাদেশের আমি এক শ্যামল-কাজল নদী। পাহাড়-পর্বত, জনপদ, গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে চলি আমি। আমার রূপ দেখে মাঝি-মাল্লা, জেলে কবি হয়ে যায়। গান গেয়ে দাঁড় টানে মাঝি। আমার এক পারে সুখ, অন্য পারে দুঃখ। মাঝখানে এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে আমি বয়ে চলি সাগর-সমুদ্রের পানে। আমার এ চলার পথে যদি কেউ কোনােভাবে একটু উপকৃত হয়, তবেই আমার সার্থকতা।

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Scroll to Top